চিকিৎসা
বিজ্ঞানের আধুনিক শাখা ফিজিওথেরাপি দিন দিন উন্নত হচ্ছে সবকিছুই। উন্নতির ধারাবাহিকতায়
থেমে নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানও।আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে ধীরে ধীরে স্থান করে নিচ্ছে নানা
শাখা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের তেমনি একটি আধুনিক শাখা ফিজিওথেরাপি।
ফিজিওথেরাপিচিকিৎসা
সংক্রান্ত নানা তথ্য যেসব রোগীর জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা,আগে ব্যথা হলে সাধারণত চিকিৎসকরা
রোগীকে দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করতে পরামর্শ দিতেন। দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ সেবনের
পর দেখা গেল রোগীদের কিডনি, লিভার ওপাকস্থলী গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই চিকিৎসা
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণার পর ঘোষণা দিলেন, বাতব্যথা ও প্যারালাইসিস রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ফিজিওথেরাপি। কারণ ফিজিওথেরাপিতে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
নেই ও এতে রোগী নিয়ম-কানুন মেনে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকছেন । তবে এখন ফিজিওথেরাপি শুধু
বাতব্যথা ও প্যারালাইসিস চিকিৎসাতেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন
ধরনের রোগীর সেবা দিয়ে আসছে। আধুনিক ফিজিওথেরাপির বিভাগগুলো হলো-
* অর্থো
ফিজিওথেরাপি বিভাগ : এ বিভাগে হাড়, জয়েন্ট ও মাংসপেশির ব্যথাসহ অন্যান্য সমস্যার চিকিৎসা
করা হয়।
* নিউরো
ফিজিওথেরাপি বিভাগ : এ বিভাগে নিউরোলজিক্যাল ব্যথা ও স্ট্রোক-পরবর্তী বিকলাঙ্গতাসহ
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য থেরাপি দেয়া হয়।
*কিার্ডিও-রেসপিরেটরি
ফিজিওথেরাপি : এ বিভাগে হৃৎপিন্ডও ফুসফুসজনিত সমস্যায় ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়। সাধারণত
আইসিইউ ও সিসিইউ রোগীদের এ সেবা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
* স্পোর্টস
ফিজিওথেরাপি : স্পোর্টস ইনজুরিতে ফিজিওথেরাপির কোনো বিকল্প নেই। এ বিভাগে ক্রীড়াজনিত
আঘাতের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের ফিটনেসের সমস্যাগুলোরও সমাধান করা হয়।
* গাইনোকলজিক্যাল
ফিজিওথেরাপি :গর্ভকালীন মাকে সুস্থ রেখে সুস্থ-সবল শিশুর জন্ম দিতে ও গর্ভ-পরবর্তী
মায়েদের পেট এবং মেরুদন্ডের নানা সমস্যায় এ বিভাগে ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়।
* চাইল্ড
ফিজিওথেরাপি : এ বিভাগে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের বিকলাঙ্গতার চিকিৎসা ও
পুনর্বাসন করা হয়।
* রিহ্যাবিলিটেটিভ
ফিজিওথেরাপি: এ বিভাগে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ও বিকলাঙ্গদের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
স্থাপনসহ বিভিন্ন স্পিস্নন্ট অরথোসিস ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের পুনর্বাসন করতে নানা
প্রশিক্ষণসহ চিকিৎসা দেয়া হয়।ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় যা করা হয়,ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা সাধারণত
দুটি ভাগে বিভক্ত :
> ইলেক্ট্রো
থেরাপি : ইলেক্ট্রো থেরাপিতে চিকিৎসা সংক্রান্ত নানাধরনের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রোগীদের
সুস্থ করে তোলা হয়। ফিজিওথেরাপির অন্তর্ভুক্ত ইলেক্ট্রো থেরাপি ডিভাইসগুলো হলো-
১. শর্টওয়েভ
ডায়াথার্মি
২. মাইক্রোওয়েভ
ডায়াথার্মি
৩. ইনফ্রারেড
রেডিয়েশন
৪. আলট্রাসাউন্ড
থেরাপি
৫. ট্রান্সকিউটেনিয়াস
নার্ভ স্টিমুলেটর
৬. ইন্টারফেরানসিয়াল
কারেন্ট
৭. কম্পিউটারাইসড
অটো ট্রাকশন
৮. প্যারাফিন
ওয়াঙ্ বাথ
৯. লেজার
থেরাপি
১০. ইলেক্ট্রনিক
ভাইব্রেটর
১১. ড্রাই
নিডেলিংম্যানুয়াল থেরাপি বা ম্যানুপোলোটিভ ট্রিটমেন্টম্যানুয়াল বা ম্যানুপোলেটিভ থেরাপিতে
রোগের ধরন ও লক্ষণ বুঝে রোগীর আক্রান্ত মাংসপেশি, জয়েন্টের জন্য প্রয়োজনীয় নানা ধরনের
ব্যায়াম ও কাইনোশলজিক্যাল মুভমেন্ট দেয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও রোগীর অবস্থার আলোকে দৈনন্দিন
জীবন ব্যবস্থার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রুটিন বেঁধে দেয়া হয়ে থাকে।ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
দেবেন কারা ? শুধু ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকরা বা ফিজিওথেরাপিস্টরাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
দেয়ার অধিকার রাখেন। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন ও বিশ্ব ফিজিওথেরাপি সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে,
কোনো দেশের রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি
(বিপিটি) ডিগ্রিধারীরা
সে দেশের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে গণ্য হবেন। বিপিটি ডিগ্রি লাভ
করার পরবিশেষায়িত বিভিন্ন বিভাগে মাস্টার্স (যেমন, মাস্টার্স অব ফিজিওথেরাপি ইন স্পোর্টস
ইনজুরি বা এমপিটি স্পোর্টস ইনজুরি) ডিগ্রিধারীরা ওই বিভাগের বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক
হিসেবে গণ্য হবেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো ফিজিওথেরাপি একটি স্বতন্ত্র
চিকিৎসা পেশা। তাই ফিজিওথেরাপিস্টরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক,
এনজিওসহ যে কোনো স্থানে নিজস্ব চেম্বারে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে রোগীদের ফিজিওথেরাপি
চিকিৎসাসেবা দিতে পারেন। তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হলে রোগীকে অবশ্যই দেখতে হবে
যিনি ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন তার ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) ডিগ্রি আছে কিনা। নইলে
ফিজিওথেরাপি নিতে এসে রোগীর লাভের চেয়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির
অবস্থা উন্নত দেশের আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ফিজিওথেরাপি এখন বাংলাদেশেও সহজলভ্য। তবে
বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ শাখাটি নতুন সংযোজিত হয়েছে বলে ফিজিওথেরাপি নিয়ে এখানে
নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা গড়ে উঠেছে। অনেক স্থানেই দেখা যায়, ফিজিওথেরাপিস্ট না হয়েও
অনেকেই ফিজিওথেরাপি দিচ্ছেন। এতে করে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা
থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ও বৃথা অর্থ নষ্ট করছেন। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতেআসা রোগীর সংখ্যা
বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু নানা অনিয়মের বেড়াজালে রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পান না। তাই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়ে অবৈধ ব্যবসা বন্ধ, রোগীদের
সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে এবং ফিজিওথেরাপিস্ট না হয়েও ফিজিওথেরাপি দেয়ার যত্রতত্র ঘটনা
ও প্রতারণা ঠেকাতে বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সরকারের কাছে ফিজিওথেরাপিস্টদের
স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠনের জোরালো দাবি জানিয়ে আসছে।রোগীদের করণীয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা নেয়ার আগে অবশ্যই ফিজিওথেরাপিস্ট সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
যিনি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীকে তার ডিগ্রি সম্পর্কে জানতে হবে ও প্রয়োজনে
ফিজিওথেরাপিস্টের ভিজিটিং কার্ডসহ সাইনবোর্ড ভালোভাবে পড়ে দেখতে হবে। যদি ফিজিওথেরাপি
চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্টের নামের নিচে ডিগ্রির স্থানে ব্যাচেলর অব ফিজিওথেরাপি (বিপিটি)
ডিগ্রিটি থাকে, তবে তার পরামর্শ অনুযায়ী নিশ্চিন্তে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন ও ব্যথামুক্ত
সুস্থ দেহে স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন। পরিশেষে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও
এ বিষয়ে সচেতনহওয়া জরুরি।
No comments:
Post a Comment